About Dawah And Tableeg

“Tabligh Jamaat” is one of the most successful movements in modern times.
Alhamdulillah,
all types of people from Ulama to illiterate people are getting benefits through their Efforts of Deen.

সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

নবী করীম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের শারীরিক গঠন ও গুনাবলী সম্পর্কে কতিপয় হাদীস (শারীরিক গঠন ও হাঁটা চলা,কথাবার্তা,ঘরোয়া জীবন)

হযরত হাসান ইবনে লী রদিয়াল্লহু নহুমা বলেন, আমার মামা হযরত হিন্দ ইবনে আবী হালাহ রদিয়াল্লহু নহু যিনি রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের শারীরিক গঠন গুনাবলী অত্যধিক স্পষ্টভাবে বর্ণনা করিতেন। আমার একান্ত আগ্রহ হইল যে, তিনি উহা হইতে আমাকেও কিছু বর্ণনা করিয়া শুনান যাহাতে আমি উহা হৃদয়ে গাঁথিয়া উহার উপর মাল করিতে পারি। (রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের সময় হাসান রদিয়াল্লহু নহু এর বয়স মাত্র সাত বছর ছিল বিধায় তিনি তাঁহার শারীরিক গঠন গুনাবলী ভালরূপে স্মৃতিবদ্ধ করিতে পারিয়াছিলেন না।) সুতরাং আমি তাঁহাকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বগুনে গুনান্বিত অতি মহ ছিলেন এবং মানুষের দৃষ্টিতেও তিনি অত্যন্ত মর্যাদাশীল ছিলেন। তাঁহার চেহারা মুবারক পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ঝলমল করিত। মাঝারি গড়ন বিশিষ্ট ব্যক্তি হইতে কিছুটা লম্বা আবার অতি লম্বা হইতে খাট ছিলেন
মাথা মুবারক সুসঙ্গতভাবে বড় ছিল। কেশ মুবারক সামান্য কুঞ্চিত ছিল, মাথার চুলে অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনাআপনি সিঁথি হইয়া গেলে সেভাবেই রাখিতেন, অন্যথায় ইচ্ছাকৃতভাবে সিঁথি তৈয়ার করিবার চেষ্টা করিতেন না। (অর্থা চিরুনী ইত্যাদি না থাকিলে এরূপ করিতেন। আর চিরুনী থাকিলে ইচ্ছাকৃত সিঁথি তৈয়ার করিতেন।) কেশ মুবারক লম্বা হইলে কানের লতি অতিক্রম করিয়া যাইত। শরীর মুবারকের রঙ ছিল অত্যন্ত উজ্জ্বল আর ললাট ছিল প্রশস্ত। ভ্রুদ্বয় বক্র, সরু ঘন ছিল। উভয় ভ্রু পৃথক ছিল, মাঝখানে সংযুক্ত ছিল না। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে একটি রগ ছিল যাহা রাগের সময় ফুলিয়া উঠিত
তাঁহার নাসিকা উঁচু ছিল যাহার উপর এক প্রকার নূর চমক ছিল। যে প্রথম দেখিত সে তাঁহাকে উঁচু নাকওয়ালা ধারণা করিত। কিন্তু গভীরভাবে দৃষ্টি করিলে বুঝিতে পারিত যে, সৌন্দর্য চমকের কারণে উঁচু মনে হইতেছে আসলে উঁচু নয়। দাঁড়ি মুবারক পরিপূর্ণ ঘন ছিল। চোখের মণি ছিল অত্যন্ত কালো। তাঁহার গন্ডদেশ সমতল হালকা ছিল এবং গোশত ঝুলন্ত ছিল না। তাঁহার মুখ সুসঙ্গতপূর্ণ প্রশস্ত ছিল (অর্থা সংকীর্ণ ছিল না।) তাঁহার দাঁত মুবারক চিকন মসৃণ ছিল এবং সামনের দাঁতগুলির মাঝে কিছু কিছু ফাঁক ছিল। বুক হইতে নাভী পর্যন্ত চুলের একটি রেখা ছিল
তাঁহার গ্রীবা মুবারক মুর্তির গ্রীবার ন্যায় সুন্দর সরু ছিল। উহার রঙ ছিল রূপার ন্যায় সুন্দর স্বচ্ছ। তাঁহার সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ মাংসল ছিল। আর শরীর ছিল সুঠাম। তাঁহার পেট বুক ছিল সমতল এবং বুক ছিল প্রশস্ত। উভয় কাঁধের মাঝখানে বেশ ব্যবধান ছিল। গ্রন্থির হাড়সমূহ শক্ত বড় ছিল (যাহা শক্তি সামর্থের একটি প্রমাণ) শরীরের যে অংশে কাপড় থাকিত না তাহা উজ্জ্বল দেখাইত; কাপড়ে আবৃত অংশের তো কথাই নাই। বুক হইতে নাভী পর্যন্ত চুলের সরু রেখা ছিল। ইহা ব্যতীত বুকের উভয় অংশ পেট কেশমুক্ত ছিল। তবে উভয় বাহু, কাঁধ বুকের উপরি ভাগে চুল ছিল। তাঁহার হাতের কবজি দীর্ঘ হাতের তালু প্রশস্ত ছিল
শরীরের হাড়গুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ সোজা ছিল। হাতের তালু উভয় পা কোমল মাংসল ছিল। হাত পায়ের আঙ্গুলগুলি পরিমিত লম্বা ছিল। পায়ের তালু কিছুটা গভীর এবং কদম মুবারক এরূপ সমতল ছিল যে, পরিছন্নতা মসৃণতার দরুন পানি আটকাইয়া থাকিত না, সঙ্গে সঙ্গে গড়াইয়া পড়িত। তিনি যখন পথ চলিতেন তখন শক্তি সহকারে পা তুলিতেন এবং সামনের দিকে ঝুকিয়া চলিতেন, পা মাটির উপর সজোরে না পড়িয়া আস্তে পড়িত। তাঁহার চলার গতি ছিল দ্রুত এবং পদক্ষেপ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ হইত, ছোট ছোট কদমে চলিতেন না। চলার সময় মনে হইত যেন তিনি উচ্চভুমি হইতে নিম্নভুমিতে অবতরণ করিতেছেন। যখন কোন দিকে মুখ ঘুরাইতেন তখন সম্পূর্ণ শরীর সহকারে ঘুরাইতেন। তাঁহার দৃষ্টি নত থাকিত এবং আকাশ অপেক্ষা মাটির দিকে অধিক নিবদ্ধ থাকিত। সাধারণত চোখের এক পার্শ্ব দিয়া তাকাইতেন। (অর্থা শরম লজ্জার দরুন কাহারো প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি খুলিয়া তাকাইতে পারিতেন না।) চলিবার সময় তিনি সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু নহুমদের সামনে রাখিয়া নিজে পিছনে চলিতেন।  কাহারো সহিত দেখা হইতে তিনি অগ্রে সালাম করিতেন
হযরত হাসান রদিয়াল্লহু নহু বলেন, আমার মামা(রদিয়াল্লহু নহু)কে বলিলাম, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের কথাবার্তা কিরূপ ছিল তাহা আমাকে শুনান। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা আখেরাতের চিন্তায় মশগুল থাকিতেন। সর্বক্ষণ (উম্মতের কল্যাণের কথা) ভাবিতেন। দুনিয়াবী জিনিসের মধ্যে তিনি কোন প্রকার শান্তি স্বস্তি পাইতেন না। বিনা প্রয়োজনে কোন কথা বলিতেন না, অধিকাংশ সময়ে চুপ থাকিতেন। তিনি আদ্যপান্ত মুখ ভরিয়া কথা বলিতেন। (জিহ্বার কোণ দিয়া চাপা ভাষায় কথা বলিতেন না যে, অর্ধেক উচ্চারিত হইবে আর অর্ধেক মুখের ভিতরে থাকিয়া যাইবে; যেমন আজকাল অহংকারীরা করিয়া থাকে।)
তিনি এমন সারগর্ভ কথা বলিতেন, যাহাতে শব্দ কম কিন্তু অর্থ বেশী থাকিত তাঁহার কথা একটি অপরটি হইতে পৃথক হইত। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কথা বলিতেন না, আবার প্রয়োজন অপেক্ষা এরূপ কমও না যে, উদ্দেশ্যই পরিষ্কার বুঝা যায় না। তিনি নরম মেজাজী ছিলেন, কঠিন মেজাজী ছিলেন না এবং কাহাকেও হেয় করিতেন না। আল্লহ তায়ালার নিয়ামাত যত সামান্যই হোক না কেন তিনি উহাকে বড় মনে করিতেন। না উহার নিন্দা করিতেন আর না মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করিতেন। (নিন্দা না করার কারণ তো পরিষ্কার যেহেতু আল্লহ তায়ালার নিয়ামাত। আর অতিরিক্ত প্রশংসা না করার কারণ হইল এই যে, ইহাতে লোভ হইতেছে বলিয়া সন্দেহ হইতে পারে।দ্বীনি বিষয়ে এবং হকের উপর হস্তক্ষেপ করা হইলে তাঁহার গোস্বার সামনে কেহ টিকিতে পারিত না, যতক্ষন না তিনি উহার প্রতিকার করিতেন (তাঁহার গোস্বা ঠান্ডা হইত না)
অপর রেওয়ায়েতে আছে, তিনি দুনিয়া বা দুনিয়ার কোন বিষয়ে রাগান্বিত হইতেন না। (কারণ তাঁহার দৃষ্টিতে দুনিয়া বা দুনিয়াবী বিষয়ের কোন গুরুত্ব ছিল না।) তবে দ্বীনি বিষয়ে বা হকের উপর কেহ হস্তক্ষেপ করিলে (গোস্বার দরুন তাঁহার চেহারা এরূপ পরিবর্তন হইয়া যাইত যে,) তাঁহাকে কেহ চিনিতে পারিত না এবং তাঁহার গোস্বার সামনে কিছুই টিকিত না, আর কেহ উহা রোধও করিতে পারিত না, যে পর্যন্ত তিনি উহার প্রতিকার না করিতেন। তিনি নিজের জন্য কখনও কাহারও প্রতি অসন্তুষ্ট হইতেন না এবং নিজের জন্য প্রতিশোধও লইতেন না। যখন কোন কারণে কোন দিকে ইশারা করিতেন, তখন সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করিতেন। ( বিনয়ের খেলাপ বলিয়া আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিতেন না। অথবা আঙ্গুল দ্বারা শুধুমাত্র তাওহীদের প্রতি ইশারা করিতেন বলিয়া অন্য বিষয়ে সম্পূর্ণ হাত দ্বারা ইশারা করিতেন।)
তিনি আশ্চর্যবোধ কালে হাত মুবারক উল্টাইয়া দিতেন। কথা বলার সময় কখনও (কথার সঙ্গে) হাত নাড়িতেন, কখনও ডান হাতের তালু দ্বারা বাম বৃদ্ধাঙ্গুলীর পেটে আঘাত করিতেন। কাহারো প্রতি অসন্তুষ্ট হইলে তাহার দিক হইতে মুখ ফিরাইয়া লইতেন অমনোযোগিতা প্রকাশ করিতেন অথবা তাহাকে মাফ করিয়া দিতেন। যখন খুশী হইতেন তখন লজ্জায় চোখ নিচু করিয়া ফেলিতেন। তাঁহার অধিকাংশ হাসি মুচকি হাসি হইত। আর সেই সময় তাঁহার দাঁত মুবারক শিলার ন্যায় শুভ্র উজ্জ্বল দেখাইত
হযরত হাসান ইবনে লী রদিয়াল্লহু নহুমা বলেন, আমি বেশ কিছুদিন পর্যন্ত রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের এই সকল গুনাবলী (আমার ভাই) হুসইন ইবনে লী রদিয়াল্লহু নহুমা এর নিকট প্রকাশ করিলাম না। কিন্তু পরে যখন আমি তাঁহার নিকট উহা বর্ণনা করিলাম, তখন দেখিলাম তিনি আমার পূর্বেই উহা মামাকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইয়াছেন এবং আমি যাহা যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, তিনি সেই সবকি জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। উপরন্তু তিনি পতার নিকট হইতে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে প্রবেশ করা, ঘর হইতে বাহির হওয়া, মজলিসে বসা এবং তাঁহার অন্যান্য তরীকা সম্পর্কে কোন কিছুই ছাড়েন নাই, সবই জানিয়া লইয়াছেন
 হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু নহু বলেন, আমি আমার পিতার নিকটে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে প্রবেশ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্তিগত প্রয়োজনে (অর্থা আহার-নিদ্রা ইত্যাদির জন্য) ঘরে যাইতেন। তিনি এই ব্যাপারে আল্লহ তায়ালার পক্ষ হইতে অনুমতি প্রাপ্ত ছিলেন। তিনিতাঁহার ঘরে থাকাকালীন সময়কে তিন ভাগে ভাগ করিতেন
  • একভাগ আল্লহ তায়ালার ইবাদাতের জন্য
  • একভাগ পরিবার পরিজনের হক আদায়ের জন্য
  • একভাগ নিজের (আরাম বিশ্রাম ইত্যাদির) জন্য
তারপর নিজের অংশকেও নিজের মধ্যে (উম্মাতের) অন্যান্য লোকজনের মধ্যে দুইভাগ করিতেন। অন্যান্যদের জন্য যে ভাগ হইত, উহাতে অবশ্য বিশিষ্ট সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু নহুম উপস্থিত হইতেন এবং তাঁহাদের মাধ্যমে তাঁহার কথাবার্তা সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছিত। তিনি তাঁহাদের নিকট (দ্বীনি দুনিয়াবী উপকারের) কোন জিনিসই গোপন করিতেন না। (বরং নির্দ্বিধায় সবরকম উপকারী কথা বলিয়া দিতেন।) উম্মাতের এই অংশে তিনি জ্ঞানী-গুণীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁহার নিকট উপস্থিত হবার অনুমতি দিতেন এবং এই সময়কে তিনি তাহাদের মধ্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে বন্টন করিতেন। তাহাদের মধ্যে হয়ত কে একটি প্রয়োজনে, কেহ দুইটি এবং কেহ অনেক প্রয়োজন লইয়া আসিত। তিনি তাহাদের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগী হইতেন এবং তাহাদের এমন কাজে মশগুল করিতেন যাহাতে তাহাদের এবং পুরা উম্মাতে সংশোধন উপকার হয়। তিনি তাহাদের নিকট সাধারণ লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতেন প্রয়োজনীয় কথা তাহাদিগকে বলিয়া দিতেন এবং বলিতেন, তোমাদের যাহারা উপস্থিত তাহারা যেন আমার কথাগুলি অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছাইয়া দেয়
তিনি আরও বলিতেন, যাহারা (কোন কারণবশতঃ যেমনপর্দা, দুরত্ব, লজ্জা দুর্বলতা ইত্যাদির দরুন) আমার নিকটে তাহাদের প্রয়োজন পেশ করিতে পারে না তোমরা তাহার প্রয়োজন আমার নিকট পৌঁছাইয়া দিও। কারণ যে ব্যক্তি এমন কোন লোকের প্রয়োজন কোন ক্ষমতাশীনের নিকট পৌঁছাইয়া দেয় যে নিজে পৌঁছাইবার ক্ষমতা রাখে না, আল্লহ তায়ালা কিয়ামাতের দিন তাহাকে দৃঢ়পদ রাখিবেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট (এই সকল উপকারী প্রয়োজনীয়) বিষয়েরই আলোচনা হইত এবং ইহার বিপরীত অন্য কোন বিষয়কে তিনি গ্রহণ করিতেন না। (অর্থা জনসাধারণের প্রয়োজন উপকারী বিষয় ব্যতীত অন্য বাজে বিষয়াদি তিনি শুনিতেনও না।) সাহাবাহ রদিয়াল্লহু নহুম তাঁহার নিকট (দ্বীনী বিষয়ের) প্রার্থী হইয়া আসিতেন এবং কিছু না কিছু খাইয়াই ফিরিতেন। (অর্থা, তিনি যেমন জ্ঞান দান করিতেন তেমন কিছু না কিছু খাওয়াইতেনও।) আর তাহারা তাঁহার নিকট হইতে কল্যাণের পথে মশাল দিশারী হইয়া বাহির হইতেন
হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু নহু বলেন, অতঃপর আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম ঘর হইতে বাহির হইয়া কি কাজ করিতেন? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজনীয় কথা ব্যতীত নিজের যবানকে ব্যবহার করিতেন না। আগত ব্যক্তিদের মন রক্ষা করিতেন, তাহাদিগকে আপন করিতেন, বিছিন্ন করিতেন না। (অর্থাএমন ব্যবহার করিতেন না যাহাতে তাহারা ভাগিয়া যায় অথবা দ্বীনের প্রতি বিতৃষ্ণ হইয়া যায়।) প্রত্যেক কওমের সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান করিতেন এবং তাহাকেই তাহাদের অভিভাবক বা সরদার নিযুক্ত করিতেন। লোকদেরকে তাহাদের ক্ষতিকর জিনিস হইতে সতর্ক করিতেন বা লোকদেরকে পরস্পর মেলামেশায় সতর্কতা সাবধানতা অবলম্বন করিতে বলিতেন আর নিজেও সতর্ক সাবধান থকিতেন
এতদসত্বেও তিনি কাহারও জন্য চেহারার প্রসন্নতা আপন সদাচারের কোন পরিবর্তন করিতেন না। আপন সাহাবীদের খোঁজ খবর লইতেন। লোকদের পারস্পারিক হাল অবস্থা জিজ্ঞাসা করিতেন উহার সংশোধন করিতেন। ভালকে ভাল বলিতেন উহার পক্ষে মদদ যোগাইতেন। খারাপকে খারাপ বলিতেন উহাকে প্রতিহত করিতেন। প্রত্যেক বিষয়ে সমতা রক্ষা করিতেন। আগে এরকম পরে আরেক রকম এইরূপ করিতেন না। সর্বদা লোকদের সংশোধনে প্রতি খেয়াল রাখিতেন যাহাতে তাহারা দ্বীনের কাজে অমনো্যোগী না হয় বা হক পথ হইতে সরিয়া না যায়। প্রত্যেক অবস্থার জন্য তাঁহার নিকট একটি বিশেষ বিধি নিয়ম ছিল। হক কাজে ত্রুটি করিতেন না আবার সীমা লংঘনও করিতেন না
লোকদের মধ্যে ৎকৃষ্ট ব্যক্তিবর্গরাই তাঁহার নিকটবর্তী থাকিতেন। লোকদের মধ্যে সেই তাঁহার নিকট সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য হইত যে লোকদের মধ্যে সর্বাধিক কল্যাণকামী হইত এবং তাঁহার নিকট সর্বাধিক মর্যাদাশীল সেই হইত যে লোকদের জন্য সর্বাধিক সহানুভুতিশীল সাহায্যকারী হইত
হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু নহু বলেন, অতঃপর আমি আমার পিতাকে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম উঠিতে বসিতে আল্লহ তায়ালার যিকির করিতেন। তিনি নিজের জন্য কোন স্থানকে নির্দিষ্ট করিতেন না এবং অন্য কাহাকেও এরূপ করিতে নিষেধ করিতেন। কোন মজলিসে উপস্থিত হইলে যেইখানেই জায়গা পাইতেন বসিয়া যাইতেন এবং অন্যদেরকে এইরূপ করিতে আদেশ দিতেন। তিনি মজলিসে উপস্থিত প্রত্যেককে তাহার প্রাপ্য অংশ দিতেন। (অর্থা প্রত্যেকের সহিত যথাযোগ্য হাসিমুখে কথা বলিতেন।) তাঁহার মজলিসে প্রত্যেক ব্যক্তি মনে করিত যে, তিনি তাহাকেই সবার অপেক্ষা বেশী সমান করিতেছেন। যে কেহ যে কোন প্রয়োজনে তাঁহার নিকটে আসিয়া বসিত অথবা তাঁহার সহিত দাঁড়াইত, তিনি ততক্ষন পর্যন্ত তাহার সহিত বসিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতেন। যতক্ষন না সে নিজেই উঠিয়া যাইত বা চলিয়া যাইত। কেহ কোন জিনিস চাহিলে তিনি দান করিতেন অথবা (না থাকিলে) নরম ভাষায় জবাব দিয়া দিতেন
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের সদা হাসিমুখ সাধারণভাবে সকলের জন্য ছিল। তিনি (স্নেহ মমতায়) সকলের জন্য পিতা সমতুল্য ছিলেন। হক অধিকারের ব্যাপারে সকলেই তাঁহার নিকট সমান ছিল। তাঁহার মজলিস ছিল সহানশীলতা লজ্জাশীলতা এবং ধৈর্য আমানতদারীর এর অপরূপ নমূনা। তাঁহার মজলিসে কেহ উচ্চস্বরে কথা বলিত না, কাহারও ইজ্জাতহানী করা হইত না। প্রথমতঃ তাঁহার মজলিসে সকলেই সংযত হইয়া বসিতেন যাহাতে কোন প্রকার দোষত্রুটি না ঘটে, তথাপি কাহারও দোষত্রুটি হইলে উহা লইয়া সমালোচনা বা উহার প্রচার করা হইত না। মজলিসে সকলেই পরস্পর সমঅধিকার লাভ করিতেন। (বংশ মর্যাদা লইয়া একে অপরের উপর অহংকার করিতেন না।) তবে তাওকওয়ার ভিত্তিতে একে অপরের উপর মর্যাদা লাভ করিতেন। একে অপরের প্রতি বিনয়-নম্র ব্যবহার করিতেন। তাহারা বড়দের সম্মান করিতেন এবং ছোটদের প্রতি সদয় ব্যবহার করিতেন, অভাবগ্রস্থদের প্রাধান্য দিতেন অপরিচিত মুসাফিরদের খাতির যত্ন করিতেন
হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু নহু বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁহার মজলিসের লোকদের সহিত কিরূপ ব্যবহার করিতেন? তিনি বলিলেন, রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম সদা হাসি-খুশি থাকিতেন, নম্র স্বভাবের ছিলেন, সহজেই অন্যান্যদের সহিত একাত্ম হইয়া যাইতেন। তিনি রূঢ় কঠোর ছিলেন না। চীৎকার করিয়া কথা বলিতেন না। না অশ্লীল কথা বলিতেন আর না কাহাকেও দোষারোপ করিতেন। অধিক হাসি-ঠাট্টা করিতেন না। মর্জির খেলাপ বিষয় হইলে মনোযোগ সরাইয়া নিতেন, তবে মর্জির খেলাপ কেহ কিছু আশা করিলে তাহাকে একেবারে নিরাশ বঞ্চিত করিতেন না। (বরং কিছু না কিছু দিয়া দিতেন বা কোন সান্ত্বনার কথা বলিয়া দিতেন।)
তিনি নিজেকে তিনটি বিষয় হইতে সম্পূর্ণ বাঁচাইয়া রাখিয়াছিলেন। একঝগড়া-বিবাদ, দুইবেশী কথা বলা, তিনঅনর্থক বিষয়াদি হইতে
অনুরূপ তিনিটি বিষয় হইতে অন্যকেও বাঁচাইয়া রাখিয়াছিলেন। একতিনি কাহারও নিন্দা করিতেন না। দুইকাহাকেও লজ্জা দিতেন না, তিনকাহারও দোষ তালাশ করিতেন না। তিনি এমন কথা বলিতেন যাহাতে সওয়াব পাওয়া যায়। যখন তিনি কথা বলিতেন, তখন উপস্থিত সাহাবাহ কেরাম রদিয়াল্লহু নহুম এমন ভাবে মাথা ঝুকাইয়া বসিতেন যেন, তাহাদের মাথায় পাখি বসিয়া আছে। (অর্থা এমনভাবে স্থির হইয়া থাকিতেন যেন, সামান্য নড়াচড়া করিলেই মাথার উপর হইতে পাখি উড়িয়া যাইবে।)
যখন তিনি কথা বলিতেন তাহারা চুপ থাকিতেন আর যখন তিনি (কথা শেষ করিয়া) চুপ করিতেন, তখন তাহারা কথা বলিতেন। (অর্থা তাঁহার কথার মাঝখানে তাহারা কথা বলিতেন না।) তাহারা কোন বিষয় লইয়া তাঁহার সম্মুখে কথা কাটাকাটি করিতেন না। যে কথা শুনিয়া সকলে হাসিতেন, তিনিও উহাতে হাসিতেন, যে বিষয়ে সকলে বিস্ময়বোধ করিতেন তিনিও উহাতে বিস্ময়বোধ করিতেন। অপরিচিত মুসাফিরের রুক্ষ্ণ কথাবার্তা অসংলগ্ন প্রশ্নাবলীর উপর ধৈর্যধারণ করিতেন। (অপরিচিত মুসাফিরগণ বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করিত বলিয়া) তাঁহার সাহাবাগণ এরূপ মুসাফিরদের তাঁহার মজলিসে লইয়া আসিতেন। (যাহাতে তাহাদের প্রশ্নাবলীর দ্বারা নতুন বিষয়া জানা যায়।)
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লাম বলিতেন, কোন অভাবী ব্যক্তি দেখিলে তাহাকে সাহায্য করিবে। কেহ সামনাসামনি তাঁহার প্রশংসা করুক তিনি তাহা পছন্দ করিতেন না, তবে কেহ তাঁহার ইহসানের শুকরিয়াস্বরূপ প্রশংসা করিলে তিনি চুপ থাকিতেন। (অর্থা শুকরিয়া আদায় কর্তব্য বিধায় যেন তাহাকে তাহার কর্তব্য কাজে সুযোগ দিতেন।) তিনি কাহারও কথায় বাধা দিতেন না যতক্ষন না সে সীমালংঘন করিত। সীমালংঘন করিলে তিনি তাহাকে বাধা দিতেন অথবা মজলিস হইতে উঠিয়া যাইতেন
হযরত হুসইন রদিয়াল্লহু নহু বলেন, আমি আমার পিতার নিকট জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহার নিরবতা কিরূপ হইত? তিনি বলিলেন। রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু লাইহি ওয়া সাল্লামের নিরবতা চার কারণে হইত। একসহানশীলতার কারণে, দুইসচেতনতার দরুন, তিনআন্দাজ করার উদ্দেশ্যে, চারচিন্তা-ভাবনার জন্য
তিনি দুইটি বিষয়ে আন্দাজ করিতেন। () উপস্থিত লোকদের প্রতি দৃষ্টিদানে। () তাহাদের আবেদন শুনার ব্যাপারে কিরূপে সমতা বজায় রাখা যায়। আর তাঁহার চিন্তা ভাবনার বিষয়বস্তু ছিল, যাহা চিরস্থায়ী হইবে (অর্থা আখেরাত) এবং যাহা ধ্বংস প্রাপ্ত হইবে, অর্থা দুনিয়া। আল্লহ তায়ালা তাঁহাকে সংযম ধৈর্য উভয়টিই দান করিয়াছিলেন। সুতরাং কোন জিনিস তাঁহাকে সীমার বাইরে রাগান্বিত করিতে পারিত না
আল্লহ তায়ালা তাঁহাকে চার বিষয়ে সচেতনতা দান করিয়া ছিলেন। একউত্তম বিষয়কে অবলম্বন করা, দুইএমন বিষয়ে যত্নবান হওয়া যাহাতে উম্মাতের দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রহিয়াছে। বর্ণিত রেওয়ায়েতে চারটির মধ্যে দুইটিই উল্লেখ করা হইয়াছে। তবে কানযুল উম্মালে চারটি বিষয় এইরূপ বর্নিত হইয়াছেআল্লহ তায়ালা তাঁহাকে চারটি বিষয়ে সচেতনতা দান করিয়াছিলেন। একনেক কাজ অবলম্বন করা, যাহাতে অন্যরাও তাঁহার অনুসরণ করিতে পারে, দুইমন্দ কাজ পরিত্যাগ করা, যাহাতে অন্যরাও বিরত থাকে, তিনউম্মাতের জন্য সংশোধনমূলক বিষয়ে জোর বিবেচনা করা, চারএমন বিষয়ে যত্নবান হওয়া যাহাতে উম্মাতের দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রহিয়াছে। (বিদায়াহ, কানয)
(হায়াতুস সাহাবাহ ১ম খন্ড)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন